ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার করুন
জন্ম ও পরিবার
- জন্ম: ২০ নভেম্বর ১৯৬৭, বগুড়া, বাংলাদেশ।
- পিতা: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যিনি ১৯৭৫–১৯৮১ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
- মাতা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (১৯৯১–১৯৯৬, ২০০১–২০০৬)।
- ভাই: আরাফাত রহমান কোকো (১৯৭১–২০১৫), ক্রীড়া সংগঠক ও ব্যবসায়ী।
শিক্ষাজীবন
- প্রাথমিক শিক্ষা ঢাকায়।
- নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও স্নাতক সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
- শিক্ষাজীবনে সরাসরি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
ব্যক্তিগত জীবন
- বিবাহ: ১৯৯৩ সালে ডা. জোবাইদা রহমানের সাথে।
- স্ত্রী: জোবাইদা রহমান—চিকিৎসক, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
- সন্তান: এক কন্যা—জাইমা রহমান, যিনি লন্ডনে বেড়ে উঠেছেন এবং আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
রাজনৈতিক উত্থান
- বিএনপির উত্তরসূরি হিসেবে ধীরে ধীরে সামনে আসেন।
- ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে দলের “ক্রাউন প্রিন্স” বলা হয়।
- ঢাকার গুলশানে হাওয়া ভবন থেকে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হন।
- যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোতে তাঁর প্রভাব ছিল ব্যাপক।
- দলের পদ: বর্তমানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ও কার্যত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিতর্কিত অধ্যায়
১. দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার
- ২০০১–২০০৬ মেয়াদে বিভিন্ন সরকারি সিদ্ধান্ত, টেন্ডারবাজি ও কমিশন বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণে তাঁর নাম ওঠে।
- তাঁকে “কিংমেকার” বা “হাওয়া ভবনের গডফাদার” হিসেবে বর্ণনা করেছেন সমালোচকরা।
২. অর্থপাচার মামলা
- ২০০৯ সালে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা হয়।
- ২০১৩ সালে ঢাকার আদালত তাঁকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
৩. ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
- আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন।
- তদন্তে উঠে আসে, হামলার পরিকল্পনায় তিনি মূল ভূমিকায় ছিলেন।
- এ মামলায় আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
৪. ২০০৪ সালের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা
- ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার কাছে পাঠানোর জন্য চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে।
- সাক্ষ্যে তাঁর নাম উঠে আসে।
- এ মামলায়ও তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৫. ব্যবসায় ব্যর্থতা
- যুক্তরাজ্যে তিনি White and Blue Consultants Limited নামে একটি পিআর কোম্পানির পরিচালক।
- ২০১৯ সাল থেকে কোম্পানিটি লোকসানে চলছে এবং প্রায় এক লক্ষ ব্রিটিশ পাউন্ড ঋণগ্রস্ত।
ইতিবাচক দিক
- বিএনপি নেতৃত্বের সংকটে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
- ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক লবিং চালাচ্ছেন।
- বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে আশা জাগান।
- তাঁর রাজনৈতিক বক্তৃতা ও প্রচারণা বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে এখনও জনপ্রিয়।
নির্বাসিত জীবন
- ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য মাকে নিয়ে লন্ডনে যান।
- এরপর থেকে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন।
- স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে লন্ডনের শহরতলিতে থাকেন।
- রাজনৈতিক কার্যক্রম মূলত ভিডিও কনফারেন্স ও অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করেন।
সমর্থন ও সমালোচনা
- সমর্থকরা বলেন: তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার উত্তরসূরি, বিএনপির ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী।
- সমালোচকরা বলেন: তিনি দুর্নীতি, অর্থপাচার, গ্রেনেড হামলা ও অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।
- তাঁর দীর্ঘ অনুপস্থিতি বিএনপিকে মাঠের রাজনীতিতে দুর্বল করে তুলেছে।
বর্তমান অবস্থা (২০২৫)
- লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটালেও বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব তাঁর হাতে।
- দলের অনেক নেতা মনে করেন, নির্বাচনের আগে তাঁর দেশে ফেরা জরুরি।
- তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি, আইনি বাধা ও ব্যক্তিগত আরামের কারণে তিনি এখনো ফেরেননি।
- বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও টিকে থাকা অনেকাংশে তাঁর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
উপসংহার
তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিতর্কিত কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন। জন্মগতভাবে তিনি রাজনীতির উত্তরসূরি হলেও তাঁর রাজনৈতিক উত্থান এসেছে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের সঙ্গে। একইসঙ্গে তিনি বিএনপির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তিনি কি দেশে ফিরে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব নেবেন, নাকি লন্ডনেই নির্বাসিত জীবন চালিয়ে যাবেন—এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অনিশ্চিত।
সূত্র
- BBC, Profile: Tarique Rahman
- Al Jazeera, Bangladesh Opposition Politics
- The Daily Star, Arafat Rahman Koko dies in Malaysia
- Prothom Alo, Education background of Tarique Rahman
- Dhaka Tribune, Who is Tarique Rahman?
- The Independent UK, BNP leader Tarique Rahman’s personal life
- BDNews24, Doctor Zubaida Rahman’s profile
- Al Jazeera, BNP and its leadership crisis
- BBC, Crown prince of BNP politics
- The Guardian, Bangladesh’s Hawa Bhaban controversy
- World Bank Report on Padma Bridge Corruption
- The Daily Star, Court verdict on money laundering case
- Reuters, Bangladesh grenade attack verdict
- The Hindu, 10-truck arms haul verdict
- UK Companies House, White and Blue Consultants Ltd accounts
- BDNews24, BNP’s lobbying abroad
- Prothom Alo, BNP leadership vacuum
- The Daily Star, BNP activities from London
- Al Jazeera, Support base of Tarique Rahman
- The Guardian, Corruption allegations against BNP heir
- BBC, Exiled BNP leader may return?
প্রতিবেদক: বিডিএস বুলবুল আহমেদ
আরও খবর জানতে ভিজিট করুন: পালসবাংলাদেশ ওয়েবসাইটে।
ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার করুন
সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি রহস্য পুরুষ। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত সাবেক ছাত্রনেতা এবং রাজনীতিবিদ, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে, তিনি সচরাচর জনসম্মুখে আসতেন না এবং আড়ালে থেকেই তার রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতেন, যার কারণে তাকে ঘিরে অনেক রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাথমিক জীবন এবং ছাত্র রাজনীতি
সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন, তবে ছাত্র রাজনীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করতে পারেননি। ১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৩ সালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকশিত হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে যে ‘নিউক্লিয়াস’ গড়ে উঠেছিল, তার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সিরাজুল আলম খান।
৬ দফা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
ছাত্রলীগের মাধ্যমে সিরাজুল আলম খান ৬ দফার সমর্থনে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে তিনি বিশেষভাবে কাজ করেন। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বাক্যসমূহের সংযোজনের কৃতিত্ব ‘নিউক্লিয়াস’ এর, যার মধ্যে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা ছিল প্রধান।
বাংলাদেশের পতাকা এবং মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭০ সালে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীনতার পতাকা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণার পরিকল্পনাও ‘নিউক্লিয়াস’ থেকেই হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, সিরাজুল আলম খান ৭ হাজার সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (BLA) গঠন করেন, যা পরে ‘মুজিব বাহিনী’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
জাসদ গঠন এবং অভ্যুত্থান
স্বাধীনতার পর সিরাজুল আলম খান নিজেই জাসদ গঠন করেন, যা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে। তিনি ‘গণবাহিনী’ নামের একটি সশস্ত্র সংগঠন গঠন করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানো। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থানেও তার সরাসরি ভূমিকা ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর, সিরাজুল আলম খান ও তার সহযোগীরা খোন্দকার মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ক্ষমতা দখলকারীদের আনুগত্য স্বীকার করেন।
জেলে থাকার পর রাজনৈতিক তত্ত্ব ও গবেষণা
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর, সিরাজুল আলম খানকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি ৪ বছর জেল খাটেন। কারাগারে থাকাকালীন তিনি মার্কসীয় তত্ত্ব এবং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, তিনি আমেরিকা চলে যান এবং ১৯৯৬-’৯৭ সালে উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তার রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং মার্কসীয় ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ অনুসারে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসেবে বিভক্ত করে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মডেল উপস্থাপন করেন।
রহস্যময়তা এবং আজকের সিরাজুল আলম খান
সিরাজুল আলম খান আজও আড়ালে থাকেন এবং খুব কমই জনসম্মুখে আসেন। তার জীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের রহস্য আজও মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে রয়েছে। সিরাজুল আলম খানের জীবনী নিয়ে বেশ কিছু বই লেখা হয়েছে, যার মধ্যে ‘প্রতিনায়ক’ অন্যতম।
উল্লেখযোগ্য সূত্র
- “সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং বাংলাদেশের রাজনীতি” – Wikipedia
- “Bangladesh’s Political History and the Role of Sirajul Alam Khan” – The Daily Star
প্রতিবেদক: বিডিএস বুলবুল আহমেদ
আরও খবর জানতে ভিজিট করুন: পালসবাংলাদেশ ওয়েবসাইটে।
ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার করুন
১৯৩২ সালের শীতের এক সকালে চিৎপুর রোডের একটি জুতোর দোকানে বসে ছিলেন এক মাঝবয়সী চেক সাহেব, টমাস বাটা। সামনের ব্যস্ত রাস্তায় হাজারো মানুষ হেঁটে যাচ্ছিল। সেইসময় একটি দৃশ্য দেখে তাঁর চোখ আটকে গেল। একটি বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা, যিনি খেটো ধুতি এবং শতচ্ছিন্ন জামা পরে ছিলেন, রক্তাক্ত পায়ে হাঁটছিলেন। রাস্তার উপর তার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরছিল এবং ধুলি মাখা পায়ে পায়ের অসংখ্য পদচিহ্ন তৈরি হচ্ছিল। তিনি অবিলম্বে বিশ্রাম নিয়ে আবার তার রিকশা টেনে সামনে এগিয়ে গেলেন।
এই দৃশ্যটি টমাস বাটার মনে গভীর দাগ রেখে যায়, এবং পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষের বুকে প্রথম বাটা কারখানা স্থাপনের চিন্তা তাঁর মাথায় আসে। তখন ভারতবর্ষে সাধারণ মানুষের হাতে জুতো ছিল খুব কম, এবং অধিকাংশ মানুষ খালি পায়ে হাঁটত।
ভারতে বাটা কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
ভারতের জুতো বাজার ছিল অত্যন্ত সীমিত এবং আমদানি করা জুতোর দাম সাধারণ মানুষের জন্য ছিল অত্যন্ত বেশি। তখন, প্রায় এক কোটি জুতো আসত জাপান থেকে, যা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে ছিল। টমাস বাটা তাই ভাবলেন, কেন না এখানে নিজস্ব কারখানা স্থাপন করা যাক যেখানে সস্তায় জুতো উৎপাদন করা হবে।
কোন্নগরের খোঁজ
বাটা সাহেব খুঁজে বের করেন, গঙ্গার তীরে কোন্নগরের একটি পরিত্যক্ত তেলকলের জায়গা, যেখানে তিনি তাঁর নতুন উদ্যোগ শুরু করবেন। সেই তেলকলটি ১৯২৯ সালের গ্রেট ডিপ্রেশন পরবর্তী সময়ে বন্ধ হয়ে যায়।
এখানে, টমাস বাটা একটি চমৎকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং দ্রুত কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেন। কলকাতার গুদাম ঘর ও অফিস থেকে সরঞ্জাম কোন্নগরে নিয়ে আসা হয় এবং টমাস বাটার নেতৃত্বে ১৪ জন চেক সাহেবের একটি টিম গঠন করা হয়।
বাটা কোম্পানির প্রথম সমস্যা
প্রথমেই তারা ভাষার সমস্যা অনুভব করেন, কারণ তারা বাংলা জানতেন না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বাটা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মানুষদের কাজে নিয়োগ দিতে শুরু করে এবং দ্রুত তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলে। তবে, একেবারে প্রথমে তাদের সাদা হাওয়াই চটি চালু করতে গেলে তা বাজারে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, কারণ সাদা রঙটি খুব দ্রুত নোংরা হয়ে যেত।
বাটা কারখানার সমৃদ্ধি
১৯৩৩ সালের মে মাসে, কোন্নগরের কারখানায় প্রথম আধুনিক চামড়ার জুতো উৎপাদিত হয়। তখন থেকে বাটা ভারতীয় বাজারে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। জাপানী জুতো কোম্পানির বিরুদ্ধে তারা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় এবং সস্তা, টেকসই জুতো তৈরি করতে সক্ষম হয়।
বাজার দখলের লড়াই
১৯৩৪ সালে বাটা জুতো সস্তা এবং আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায়, তারা শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, এবং ভারতের অন্যান্য শহরে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে থাকে। ১৯৩৪ সালের শেষের দিকে প্রায় ৮৬টি শহরে তাদের রিটেল চেন বিস্তৃত হয়েছিল।
বিশাল উদ্যোগের পরিণতি
১৯৩৪ সালে কোন্নগরের বাটা কারখানা আরও বড় আকারে গড়ে ওঠে। ১৯৩৫ সালের শেষে এই কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এই সময়, স্থানীয় অনেক মানুষ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছিল।
ভবিষ্যতের দিকে
১৯৩২ সালে, বাটা পরিবার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কোন্নগর শহরের এই প্রথম কারখানা শুরু হয়েছিল, এবং এটি দেশব্যাপী একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে। যদিও এখন বাটা কোম্পানির প্রথম কারখানার স্থলটি পরিত্যক্ত, কিন্তু কোন্নগর এখনও বাটার ঐতিহ্যের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
সূত্র
- “India’s First Bata Factory and Konnagar’s History” – Konnagar Heritage
- Google Map Location: [Bata Factory, Konnagar](P954+RWJ, Konnagar, Mirpur, West Bengal 712235, India)
প্রতিবেদক: বিডিএস বুলবুল আহমেদ
আরও খবর জানতে ভিজিট করুন: পালসবাংলাদেশ ওয়েবসাইটে।
বিষয়ঃ
ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার করুন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার ঘটনাটি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বরং বিশ্ব ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এই হত্যাকাণ্ডের আগে, গোয়েন্দা সংস্থা এবং রাজনৈতিক মহল থেকে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করা হচ্ছিল, তাঁর জীবনের প্রতি হুমকি এবং ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা সম্পর্কে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্কতা
বিশ্বের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে ভারতের ‘র’ (RAW), বঙ্গবন্ধুকে সম্ভাব্য সামরিক অভ্যুত্থান এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছিল। RAW-সহ আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বঙ্গবন্ধুকে নির্দিষ্ট সেনা কর্মকর্তাদের নামও দিয়েছিল, যারা সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এসব তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর আশপাশের লোকদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন, কিন্তু ষড়যন্ত্রের গোপনতা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি এটিকে ব্যাহত করতে সক্ষম হয়েছিল।
১৫ আগস্টের আগে ঘটনা
১৫ আগস্টের কয়েকদিন আগে, বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, সেখানে বিশৃঙ্খলা হতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর উপর হামলার আশঙ্কা ছিল। অথচ বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের প্রতি এই ধরনের হুমকি সত্ত্বেও অধিকাংশ সময় সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে থাকতেন।
একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো যে, তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থাকতেন, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে দুর্বল ছিল। তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল এতটা অনিয়ন্ত্রিত যে, সাধারণ মানুষও তাঁর বাড়িতে সহজেই প্রবেশ করতে পারত।
খন্দকার মোশতাক আহমদের ভূমিকা
এদিকে, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি পরবর্তীতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অত্যন্ত আনুগত্য প্রকাশ করতেন। তিনি নানা অজুহাতে বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য দেখাতেন। খন্দকার মোশতাকের এসব আচরণ মূলত বঙ্গবন্ধুর প্রতি ষড়যন্ত্রের গোপন ইঙ্গিত ছিল। তিনি কখনো বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি হুমকি না দিলেও, তাঁর কার্যক্রম ও ভাষা বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরিকল্পনার অংশ ছিল।
গোয়েন্দা তথ্যের অবহেলা
গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করলেও, এই তথ্যগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন বা গ্রহণ করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সরকারের ইন্টেলিজেন্স ফিল্ডে যথাযথ মনোযোগ না থাকার কারণে এই তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কাজে আসেনি।
জাতীয় ঐকমত্য ও শাসন কাঠামো
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর, বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা এবং সাংবিধানিক সংকট আরও গভীর হয়ে ওঠে। ১৫ আগস্টের পর গণতন্ত্রের পথচলা বিপন্ন হয়ে পড়ে এবং সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে, একুশ শতকে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ এবং জাতীয় ঐকমত্যের ওপর কাজ চলছে।
উল্লেখযোগ্য সূত্র
এই তথ্যগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং ইতিহাসবিদের গবেষণায় পাওয়া গেছে এবং এগুলি বিখ্যাত ইতিহাস সংকলনগুলোর অংশ। অনেক গোপন গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংকটের বিশ্লেষণে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকা ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
সূত্র:
- “Bengali Political History and the Assassination of Sheikh Mujibur Rahman” – The Daily Star
- “The Role of RAW in the Assassination of Sheikh Mujib” – Bangladesh Sangbad Sangstha (BSS)
- “Investigative Insights into the Assassination of Sheikh Mujibur Rahman” – The Financial Express
প্রতিবেদক: বিডিএস বুলবুল আহমেদ
আরও খবর জানতে ভিজিট করুন: পালসবাংলাদেশ ওয়েবসাইটে।



